12/15/2025 সংস্কারের জন্য বরাদ্দ ১২৪ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:১৪
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের জন্য ১২ হাজার ৫৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। এর মধ্যে বাউন্ডারি বা সীমানা প্রাচীর নেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে দরজা ও জানালা। ভোটকেন্দ্র হিসাবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবহার অনুপযোগী এসব ভোটকেন্দ্র মেরামত ও সংস্কারের জন্য ১২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামতের জন্য এর আগে অর্থ উপদেষ্টার কাছে ১২৪ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে আধা-সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা। সে প্রস্তাব পর্যালোচনা করে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদিও চলতি বাজেটের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রমের বিপরীতে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যয়ের অর্থ দেওয়া হবে। সে আলোকে বাজেটের বাইরে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার ও মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেখানে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হয়েছে এবং আগামী দিনে ব্যবহার হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে সংস্কার ও মেরামতের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন থেকে জরুরিভিত্তিতে সেগুলোকে সংস্কার ও মেরামত করে ভোটগ্রহণের উপযোগী করে তোলার তাগিদ দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, জাতীয় নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র (প্রাথমিক বিদ্যালয়) মেরামত ও সংস্কারের অর্থ চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার ডিও পাওয়ার পর চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেওয়া আছে। সে বরাদ্দের বাইরে এ অর্থ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ এটি পর্যালোচনা করে বিশেষ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু বিষয়টি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই একে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা ব্যয়ের আওতায় অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বিশেষ বরাদ্দ হিসাবে ১২৪ কোটি টাকা দেওয়ার অনুরোধ করেন। বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
সূত্রমতে, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ৮৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ইতোমধ্যে পুরো অর্থ খরচ হয়েছে। ছোট খাত মেরামত বাবদ ১৩৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের সমুদয় অর্থ ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে। ফলে এই দুই খাতে কোনো অব্যয়িত অর্থ অবশিষ্ট নেই। ফলে ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কারের লক্ষ্যে পিইডিপিও এর আওতায় বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আওতায় ‘অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা’ কোডে ৮০ কোটি টাকা সংস্থান আছে। এই অর্থ দিয়েও পুরো সংস্কার ও মেরামত কার্যক্রমের চাহিদা (১২৪ কোটি টাকা) মেটানো সম্ভব নয়।
সূত্রমতে, ভোটকেন্দ্র হিসাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ব্যবহার উপযোগী আছে কিনা, তার ওপর সম্প্রতি একটি রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয় নির্বাচন কমিশন থেকে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মাঠপর্যায় থেকে প্রতিবেদন আসে কমিশনে। সে প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬২৪ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৫৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার ও মেরামত প্রয়োজন। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে অর্থ উপদেষ্টাকে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর সব ধরনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে মাত্র ৮০ কোটি টাকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে ছিল, সেটি দিয়ে ১২ হাজার ৫৩১টি বিদ্যালয় সংস্কার ও মেরামত করা হলে অবশিষ্ট ৫৩ হাজার ৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো কাজ করা সম্ভব হতো না। কারণ, বাজেটে আর অর্থ থাকছে না। এতে আগামী দিনে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বিঘ্নিত হতে পারে। এ বিবেচনায় যেগুলো ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হবে, ওইসব বিদ্যালয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য অর্থ চাওয়া হয়েছিল।